2. আসল ইউনিক্স!!! সেটা আবার কি ?

BSD অপারেটিং সিস্টেমগুলো কোন ইউনিক্স ক্লোন নয়। এগুলো উদ্ভূত হয়েছে AT&T'র গবেষণালব্ধ ইউনিক্স অপারেটিং সিস্টেম হতে যা কিনা আজকের দিনের UNIX System V'র পূর্বসূরী। ঘটনাটা একটু আশ্চর্যজনক, বিশেষ করে AT&T যখন তাদের সোর্সকোডকে কখনই ওপেনসোর্স হিসেবে উন্মুক্ত করে দেয়নি।

এটি সত্যি যে AT&T ইউনিক্স কোন ওপেনসোর্স সফটওয়ার নয়। কপিরাইটের কথা চিন্তা করলে BSD'কেও ইউনিক্স বলা যায় না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে AT&T তাদের ইউনিক্সে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলীস্থিত কম্পিউটার সায়েন্স রিসার্চ গ্রুপের সোর্সকোড ব্যবহার করেছিল। ১৯৭৬ থেকে CSRG তাদের সফটওয়ারের টেপ ছাড়তে থাকে এবং সফটওয়ারগুলোর নাম দেয়া হয় Berkley Software Distribution বা BSD

প্রথম দিককার BSD'তে শুধু ইউজার সফটওয়ারই থাকতো। কিন্তু হঠাত্‍ করেই এ অবস্থার পরিবর্তন হয় যখন Defence Advanced Research Agency (DARPA) র সাথে CSRG'র একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এই চুক্তির ফলে CSRG'র উপর DARPA'র নেটওয়ার্ক প্রটোকল ARPANET আপগ্রেড করার দায়িত্ব বর্তায়। নতুন এই প্রটোকলটিকে তখন বলা হত ইন্টারনেট প্রটোকল। পরবর্তীতে এই প্রটোকলের নাম হয়ে যায় TCP/IP। TCP/IP ছিল ইন্টারনেট প্রটোকলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম হিসেবে যে BSD'টি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল, তা ছিল 4.2 BSD'র অংশ; এটা ১৯৮২ সালের কথা।

আশির দশকে বেশ কিছু নতুন ওয়ার্কস্টেশন কোম্পানী গড়ে ওঠে। এদের অনেকেই নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরী না করে ইউনিক্সকেই তাদের কম্পিউটারের জন্য লাইসেন্স করিয়ে নেয়। বিশেষ করে সান মাইক্রোসিস্টেম ইউনিক্সকে লাইসেন্স করিয়ে 4.2 BSD'র ওপর ভিত্তি করে SunOS তৈরী করে। যখন AT&T নিজেই ইউনিক্সকে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করার অনুমতি পায়, তখন তারা প্রথমে System III এবং তার কিছুকাল পরেই System V বাজারজাত করতে থাকে। System V'র কোন নেটওয়ার্কিং কোড ছিল না, তাই প্রতিটি সংস্করণেই BSD'র সফটওয়ার অন্তর্ভুক্ত থাকতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল TCP/IP সফটওয়ার, csh শেল এবং VI এডিটর। BSD থেকে নেয়া এই সফটওয়ারগুলোকে একত্রে বলা হত Berkeley Extensions

BSD'র সফটওয়ার টেপে AT&T'র সোর্সকোড থাকতো বলে ইউনিক্স সোর্স লাইসেন্সের প্রয়োজন হত। ১৯৯০ সালের দিকে দেখা গেল যে CSRG'র অর্থসংস্থান প্রায় শেষ এবং সম্পূর্ণ BSD প্রজেক্টটিই বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এ অবস্থায় গ্রুপের কিছু সদস্য AT&T'র মালিকানাধীন অংশটুকু বাদ দিয়ে সোর্সকোডের অবশিষ্ট অংশ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। উল্লেখ্য যে, BSD'র কোডের নিজস্ব অংশটুকু ছিল ওপেনসোর্স। অবশেষে নেটওয়ার্কিং টেপ ২, যা কিনা NET/2 নামে পরিচিত, প্রকাশের মাধ্যমে সোর্সকোড প্রকাশের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়। Net/2 কোন স্বয়ংসম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম ছিল না, Net/2'র কার্নেল থেকে প্রায় ২০% কোড বাদ দেয়া হয়েছিল। CSRG'র একজন সদস্য উইলিয়াম এফ জোলিটস্‌ এই অবশিষ্ট কোডটুকু নতুন করে লেখেন এবং ১৯৯২ এর প্রথম দিকে 386BSD নামে প্রকাশ করেন। একই সময় CSRG'র প্রাক্তন সদ্যস্যদের একটি গ্রুপ Berkley Software Design Inc নামে একটি কোম্পানি গঠন করেন এবং তারপরই Net/2'র সোর্সকোডের ওপর ভিত্তি করে BSD/386 নামের একটি অপারেটিং সিস্টেমের বেটা সংস্করণ প্রকাশ করেন। এই অপারেটিং সিস্টেমটির নাম পরির্বতন করে পরে BSD/OS করা হয়।

অপারেটিং সিস্টেম প্রজেক্ট হিসেবে 386BSD কখনই ভালভাবে দাঁড়াতে পারেনি। ১৯৯৩ সালে এই প্রজেক্ট থেকে দুটি দল বের হয়ে যায় এবং NetBSDFreeBSD নামে আরো দুটি অপারেটিং সিস্টেম প্রজেক্টের সূচনা করে। মূলতঃ 386BSD'র উন্নতির ব্যাপারে অনেকে অপেক্ষা করতে রাজি না হওয়াতেই এই দুটি প্রজেক্টের আবির্ভাব ঘটে। NetBSD প্রজেক্টের কাযক্রম শুরু হয় বছরের প্রথমদিকে আর বছরের শেষে প্রকাশিত হয় FreeBSD'র প্রথম সংস্করণ। মাঝের সময়ে এই প্রজেক্ট দুটির সোর্সকোডে এত বেশি পার্থক্য দেখা দেয় যে এদেরকে আর কখনই একীভূত করা যায়নি। তাছাড়া প্রজেক্ট দুটোর লক্ষ্যও ছিল ভিন্ন, পরে যা আলোচনা করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে NetBSD প্রজেক্ট থেকে আরেকটি দল বের হয়ে যায় এবং এভাবেই সূচিত হয় OpenBSD প্রজেক্ট।